কবিকন্ঠ

শ্রী

অতঃপর শব্দায়ন

কবিতা: শ্রী
কবি: বিধান সাহা

শ্রী

মর্মভেদী ফুলের নাম সোনাই। তার মিথ্যে উড়ানে ভেসে গেছে যে সহজমানব, সে-ই আমি। কাকতাল নয় হয়তো, তবু ঈশানের মেঘে আমরা দেখেছিলাম নিজেদের অবয়ব। কাশফুলের বিনম্র ভঙ্গিতে আমরা জেনেছিলাম মানুষ মাত্রই ছলনাময়ী। তবু পৃথিবীতে সহস্র পাখির ঝাঁক যখন নেমে আসে, তখন নিজেকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়। মনে হয়, অন্য কোনো অধিভৌতিক অন্ধকারে লিখে যাচ্ছি নিজের নাম। বর্ণক্রম মনে নেই, তবু, দাঁড়িয়েছি নিজস্ব ছায়ায়। একে তুমি কী বলবে? মনে করো, সমস্ত গোপন ভেদ করে একদিন আমার সকল সত্য তোমাকে স্পর্শ করল। সেদিনও তুমি নিজের নামের বদলে বলবে—প্রলয়মাধুরী?
ধরো, তোমাকে বললাম মিথ্যে ফুলের সুবাস নিয়ে তুমি কাটিয়ে দিচ্ছো সমস্ত গোধূলি। তুমি তাকে স্বীকার করে নেবে? ধরো, তোমাকে বললাম, তুমি সমর্পিত সমস্ত মৌনতার কাছে। তখন? রাত যত গভীর হবে এই বলাগুলো তোমাকে পোড়াতে থাকবে। তুমি কি তখন ঘুমাতে না পেরে ছেড়ে দেবে বিকল্প জীবনানন্দ? মৃত্যু সুমহান ঠিক; ততধিক জীবন। ধরো, সমস্ত লালপদ্ম বিট্রে করে বসল। ধরো, সমস্ত দুপুর গেয়ে উঠল ব্যক্তিগত উজান। তখন? আকাশচূড়ার কাছাকাছি আমি নেই তা তুমি জানো। তুমি জানো, একটি বিকেল হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে আমি কোনোদিন সন্ধ্যা দেখিনি। পাতাবাহারের বর্ণবিভায় লুকিয়েছি নিজেকে বরং। তবু কি তোমার ধারাপাত শেষ হবে না? নিজের ভেতর থেকে কি এখনও জেগে উঠবে না অকৈতব রব? এই জন্মান্ধের দিকে তাকাও। দেখো, নিজস্ব রং হারিয়ে যে ক্রমাগত কেঁপে কেঁপে উঠছে। আর তোমার দিকে তাকিয়ে আছে নিরুপায়।
যদি পারো, আমাকে ফেরাও, সোনা! একে একে বলে দাও পছন্দের রাংতা নদীর নাম। ছকে ছকে এঁকে রাখো রাঙা মন্দাকিনী। শশীবক্ষে আমি যে কোমল মাধুরী দেখেছি, সেই দৃশ্যে অমরত্ম সই! আমাকে শোনাও আজ দুর্দিনের মৃদুল পাঁচালি। এতোই যদি কলঙ্কের ভয়, তাহলে বলো, কেন ধনুকের ছিলার দিকে তাকিয়েছিলে পুনশ্চ বঙ্কিম চোখে?
পথ আমাকে পথিক করেছে। তুমি বলো, এই সত্য অর্থহীন? তুমি বলো, দিগন্তের ওপারে যে তুমুল বটগাছ তার ছায়ার দিকে ছুটে যাওয় অনুচিত? যেহেতু স্বৈরশাসনের নিচে বেরিয়েছি দিকভোলা মাঠে!
অনেক ঘুমের পরে তোমাকে দেখেছি আজ। দেখেছি, বিসর্জনের আয়োজন করে তুমি গেয়ে চলেছো পরিযায়ী গান। আজ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করো তোমার সম্পর্কে আমার ধারণা কী? আমি ততধিক মৌনতাসহ হারিয়ে যাব নিজেরই গহনচরে। তোমার অগাধ ঘ্রাণ পাই বলে, ভেবো না কাশফুল মানেই মেঘবালিকা। ছত্রে ছত্রে ছড়িয়েছ আমার নিদাঘে।

ক্রন্দন শুকিয়ে গেলে চিবুকে যে নদী জন্ম নেয়, তার নাম শ্রী।

অব্যক্ত সন্ধির দিকে
কবিকন্ঠ
কেবলা
কবিকন্ঠ
পাতাবাহার
কবিকন্ঠ
সম্পর্ক
কবিকন্ঠ