ফিকশন

অনলাইনে বাঙালি শিকার।। সিরাজের দরবার।।

অতঃপর শব্দায়ন

বাঙালির হুজুগে আর লোভী স্বভাবকে পুঁজি করেই ডিজাইন করা হয় নতুন নতুন প্রতারণার ফাঁদ। জন্ম নেয় ডান হাত বাম হাত, জন্ম নেয় অ আ হ্রস-ই-ভ্যালি, হ্রস-ই-অরেঞ্জসহ হালের নদ নদীর শিরোমনি কর্ণফুলী। প্রতিবারই ’ডাক্তার আসিবার পূর্বেই রোগি মারা গেলো’ টাইপের ঘটনা ঘটে বাঙালি প্রতারিত হয় আবার প্রতারণার ফাঁদে পা ফেলবার অপেক্ষা করে।

নবাব সিরাজও কম বাঙালি নয়! দেখুন সিরাজের দরবারের ২য় সিজনের ২য় পর্ব।

অনলাইনে বাঙালি শিকার।। সিরাজের দরবার ।।

হ্যালো বন্ধুরা, সবাইকে সিরাজের দরবারে স্বাগতম, খোশামদেদ। আমি সিরাজ। অনেক ভেবে একটা বিষয়ে আমি নিশ্চিত যে, বাঙ্গালীদের নিয়ে আসলে ভাবার কিছু নেই। এর কারণ দুইটা এক বাঙালি হচ্ছে
এক.
বাঙালিরা হচ্ছে হুজুগে গুজবে তামাশাখোড় জাতি
দুই. বাঙালিরা হচ্ছে লোভী।
এই যেমন ধরেন কোন এক দরজার সামনে এক বাঙালি এসে দাঁড়ালো হঠাৎ তার পকেট থেকে একটা পাঁচ টাকার কয়েন পড়ে গিয়ে দরজার নিচে চলে গেল। একটু পরে, ওই দরজার নিচ থেকে একটা ৫ টাকার বদলে দুইটা ৫ টাকার কয়েন বের হয়ে আসলো। তখন সে বাঙালি সাময়িক লাভের আশায়, তার পকেটে থাকা সব টাকা পয়সা ওই দরজার নিচ দিয়ে দিয়ে দিবে। প্রথমবারের মতো এবারও দরজা দিয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ টাকা বের হয়ে আসলো। এতে বাঙালির আক্কেল গুড়ুম! এখন সে কি করবে জানেন, সে তার সব সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে বন্ধু-বান্ধবদের থেকে ধার নিয়ে, এমনকি ব্যাংক থেকে কিস্তি দিয়ে হলেও বড় অঙ্কের একটা টাকা ওই দরজা দিয়ে দিয়ে দিবে। এক বাঙালির দেখা দেখি আরো হাজার বাঙ্গালি ওই একই কাজ করবে। একবারও ভাববে না যে ঠিক কি কারনে টাকা দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। এবার হলো আসল মজা যখন একটা বড় অংকের টাকা ওই দরজার নিচ দিয়ে দিবে। কিন্তু আর কোন কিছু ফেরত পাবে না। তখন এই বাঙালির আক্কেল হবে যে, এটা ছিল একটা প্রতারণা। তো এই যদি হয় বাঙালির আক্কেল তাহলে তাকে নিয়ে আর কি ভাববো বলুন।

সে সময় মানে ১৭৫৭ সালে মীরজাফররাও তাৎক্ষণিক লাভের আশায় ইংরেজদের সাথে হাত মিলিয়ে ছিল। তখনকার সময় আর এখনকার সময়ের মধ্যে পার্থক্য আছে, সেটা হলো সেসময় বোকা বনে যাওয়ার বা ধোকা খাওয়ার উপায় ছিল কম। আর এখন অ্যাক্সেস টু দ্য ইন্টারনেটের কারণে হাজার হাজারটা ফাঁদ খোলা। এই ধরেন ই-ওরেঞ্জ, ইভ্যালি এগুলো তো আছেই। সেইসাথে আরও আছে অনলাইনের হাজার হাজারটা ফাঁদ। বাঙালি কি পারবে এসব ফাঁদ থেকে বের হতে। চলুন প্রমাণ হয়ে যাক।

-নাম্বারে কল করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনাকে কীভাবে সহযোগিতা করতে পারি, স্যার।
আমার মোবাইলে একটি মেসেজ এসেছে সেটা হল, আমি ২৫ হাজার টাকা জিতেছি।
-অভিনন্দন স্যার, আপনি সেই সৌভাগ্যবান দশজনের একজন। স্যার, আপনার ব্যাংক একাউন্ট কোন ব্যাংকে? টাকাটা আপনার কাছে এখনই পৌঁছে যাবে স্যার।
আমার *** ব্যাংক অ্যাকাউন্টে
-একাউন্ট নামটা জানাবেন?
নবাব সিরাজউদ্দৌলা।
-আপনার ব্যাংক আইডি নাম্বার বলুন, স্যার। আইডি নাম্বার লাগবে? (জ্বী, স্যার)
একটু হোল্ড করুন... আমার আইডি নাম্বার হল, ১২৩১২৩১২৩।
-বাহ! অনেক সুন্দর নাম্বার, স্যার পাসওয়ার্ডটা যেন কি স্যার?
পাসওয়ার্ড??
-হ্যাঁ স্যার, পাসওয়ার্ড তো লাগবেই, না হলে পুরস্কারটা কিভাবে দেবো, স্যার।
আমার পাসওয়ার্ড হল ০০০।
-স্যার, আপনার ফোনে একটি ওটিটি নাম্বার গিয়েছে, স্যার। ওটিপিটি কি একটু জানাবেন, স্যার।
ওটিপি নাম্বার হল ১০১০।
-অনেক অনেক ধন্যবাদ, স্যার। স্যার আরেকটু পরেই আপনি আপনার পুরস্কারের টাকা পেয়ে যাবেন। ধন্যবাদ স্যার।
ধন্যবাদ... ধন্যবাদ…

পরীমনি জেলে কি করলেন ভিডিও সহ!!
মোটরসাইকেল কিনলে গাড়ি ফ্রি। ১৪ দিনের ডেলিভারি অনলাইনে শীঘ্রই অর্ডার করুন!

পেমেন্ট হয়ে গেছে!
মোটরসাইকেলও দিল না, গাড়িও দিল না, ফোনও ধরে না!

এই হ্যালো,
-হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন বলুন!
এই আমার মোটরসাইকেল কোথায়? গাড়ি? অ্যাহ!
-হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন, আপনার অর্ডার নাম্বার বলুন।
আমার ৪২৪২২০!
-আচ্ছা আচ্ছা, পেয়ে যাবেন। ঘুমান এখন যান।

১৪ দিনে পাওয়ার কথা। এখন ১৪ সপ্তাহ হয়ে গেছে। আমার গাড়ি কই, আমার মোটরসাইকেল কই? আমার এসব লাগবে না, আমারে আমার টাকাটা ফেরত দেন।
-আরে ভাই, একবার অর্ডার হলে কি আর ক্যানসেল করা যায়, ধুর!!
হ্যালো!! হ্যালো!!

এবার বলুন এই গুজবপ্রিয় লোভী বাঙ্গালীদের নিয়ে কি ভাববো?

হুজুর হাজির ।। সিরাজের দরবার ।।
ফিকশন
কী উপায় জাঁহাপনা ।। সিরাজের দরবার ।।
ফিকশন
রকমারি বোকামি ।। সিরাজের দরবার ।।
ফিকশন
বাঙালীর তৃতীয় হাত ।। সিরাজের দরবার ।।
ফিকশন