ফিকশন
সফলতার পাঁচটি উপায়।। সিরাজের দরবার।।
অতঃপর শব্দায়ন
প্রতিদিন অনেক প্রশ্নই আসে নবাব সিরাজের কাছে। অনেকে অনেক কিছুই জানতে চায়। নবাবেব তো অঢেল সময় তাই ক্লান্তি নেই কোন। তেমনি একজন জানতে চায় সফলতার উপায়! নবাব তো বিব্রত কেননা নিজেই হয়েছেন পরাজিত! তাহলে এই প্রশ্নের উত্তর কী নবাব দেবেন না? জানতে হলে দেখুন সিরাজের দরবারের সিজন ০২ এর প্রথম এপিসোড!
সফলতার পাঁচটি উপায়।। সিরাজের দরবার।।
হ্যালো বন্ধুরা, সবাইকে সিরাজের দরবারে স্বাগতম, খোশামদেদ। আমি সিরাজ। আমার কাছে যেসব চিঠিপত্র ইমেইল আসে সেগুলো একটু অবসর সময়ে দেখে নিচ্ছিলাম। তো আমার প্রজারা থুক্কু আমার ভক্তরা, না না শুভাকাঙ্ক্ষীরা। তা আমার শুভাকাঙ্খীরা আমার কাছে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চায়। যেমন আমার ইতিহাস, আমার স্বভাব, আমি কি খেতে পছন্দ করি? বঙ্গদেশে আমার বংশধর আছে কিনা? আমি কেন জেনেশুনে মীরজাফরকে বিশ্বাস করলাম? এগুলো থেকে শুরু করে বর্তমানের ফ্যাশন প্রশ্ন- সফলতার পাঁচটি দশটি উপায়। নবাবের কি কি বিষয় গুণ থাকতে হয়? এরকম আরও নানান কিসিমের প্রশ্ন।
আমি একটা জিনিস খেয়াল করলাম। ইদানিং আমার কাছে যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশি বেশি জানতে চায়, সেটা হল সফলতার পাঁচটি উপায়। দেখুন তো, কি বিব্রতকর পরিস্থিতি! যেখানে আমি কথিত যুদ্ধে পরাজিত সম্রাট, সেখানে আমি কিভাবে বলব জীবনে কিভাবে জয়ী হতে হয়। যেখানে আমি নিজেই ব্যর্থ! পরে যখন নতুন নতুন সোশ্যাল মিডিয়ায় আসলাম তখন তো আমার চক্ষু চড়কগাছ! মানে টিনের চালে কাক, আমিতো অবাক!
এখানে যারা সফলতার কথা বলে তারা জীবনে সফল হয়নি। যে ছাত্রদের সাজেশন দেয় সে নিজেই পড়াশোনায় জবরজং আস্ত গাধা। যে সিনেমার জন্য টিপস দেয় সে জীবনে সিনেমা বানায়নি। এমনকি শুটিং করার অভিজ্ঞতাও তার নাই। মুখে বড় বড় নীতিকথা সেই সবচেয়ে বড় চোর। কবিতা নিয়ে ভারি ভারি কথা অথচ বাংলা ডিগ্রিটাই তার মূল ভিত্তি। প্রফেশনাল সাকসেস নিয়ে কথা বলে অথচ তার প্রফেশন হকারিগিরী। ধর্ম নিয়ে সদোপদেশ দিচ্ছে, তার তলায় সব অপধর্ম। এসব দেখে তো আমার মেজাজ আবার তিরিক্ষে হয়ে গেল। কিন্তু পরে জানলাম এসব যারা করে তারা অনলাইনে একটি বিষয় সার্চ দিয়ে যা যা আছে সব গিলে আবার উগরে দেয়। কিন্তু আমি তো তেমন মানুষ নই। পড়ে গেলাম বিপদে। এখন কি করি, আমারও তো একটা সোশ্যাল লাইফ শুরু হয়ে গেছে। মানে এই সিরাজের দরবার কারেন্ট বিষয় নিয়ে কথা না বললে ট্রেন্ডিং বিষয়ে কয়েকটা পোস্ট না দিলে আবার ভিউয়ার কমে যায়। তাই অনেক চিন্তা ভাবনা করে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে হেরে না যাওয়ার ৫টি উপায় আপনাদের সামনে পেশ করলাম।
বিষয় তো একই, এই হেরে না গেলেই তো আসলে জয়ী হওয়া যায়। আর হেরে যাওয়া তো আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাতেই আছে। আপনারা বিষয়টাকে একটু উল্টায়ে নিলেই সফল হওয়ার পাঁচটি উপায় পেয়ে যাবেন। তো আমার এই হেরে না যাওয়ার পাঁচটি উপায় এর মধ্যে প্রথমটি হলো, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়া যাবে না। এর উদাহরণ আমি ইংরেজরা আমার কোন কিছুই করতে পারবে না। এই বিশ্বাসই আমার পরাজয়ের সবচেয়ে বড় কারণ। তাই শত্রু যেই হোক না কেন তাকে হালকা ভাবে দেখা যাবে না। যদি আপনার শত্রু হয় পরীক্ষা, তাহলে তাকে হালকা ভাবে নেওয়া যাবে না। এমনকি ভাইভাও হালকা ভাবে নেওয়া যাবে না। সব সময় প্রচেষ্টা থাকতে হবে, প্রস্তুত থাকতে হবে।
তো দ্বিতীয় উপায় হল, নিজের সবচেয়ে ভালো গুণটির চর্চা করুন। এর উদাহরণ হিসেবে আসতে পারে মীরজাফর আলী খাঁ সাহেব। তিনি জানতেন তার সবচেয়ে ভালো গুণ হলো অন্যের বিশ্বাস অর্জন করা। তিনি একই সাথে আমার এবং ইংরেজদের বিশ্বাস অর্জন করে নিজের জীবনে সফল হয়েছেন। তাই এখন আপনার ভালো গুণটি যদি হয় গান গাওয়া তাহলে আপনি গান গাইবেন। যদি হয় অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভাঙা তাহলে কাঁঠাল ভাঙবেন। এই প্রতিযোগিতাময় পৃথিবীতে নিজের গুণটিকে চিনতে শিখুন।
তৃতীয় উপায় হল, সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করা। এখানে উদাহরণ হিসেবে আমি টানব লর্ড ক্লাইভকে। দেখুন কি নিখুঁতভাবে পলাশীর যুদ্ধে বৃষ্টির পর মীরজাফরকে বাধ্য করল আমার কাছে আছে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব নিয়ে আসতে। আমিও মীরজাফর এর কথা বিশ্বাস করে যুদ্ধবিরতি দিয়ে দিলাম। সেই সুযোগে ক্লাইভ আমার সৈন্যের ওপর আক্রমণ করল কেউ আর দাঁড়াতেই পারল না।
চতুর্থ উপায় হল, প্রমাণ ছাড়া কাউকে বিশ্বাস করবেন না। এর উদাহরণ আমি ছাড়া আবার কে। মীরজাফর সাহেব পবিত্র কুরআন শরীফ ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। প্রমাণ তো ছিলই! কিন্তু না, প্রমাণ মানেই কাজ করে দেখানো। আবার একবার প্রমাণ করেই একবার প্রমাণ করলেই সারা জীবনের জন্য মাফ তাও কিন্তু না! তার মানে দাঁড়ায় কাউকে আসলে বিশ্বাস করবেন না।
আমার সফলতার মধ্যে শেষ উপায়টি হলো কারো উপদেশ মানা যাবে না। এর উদাহরণ আমি ছাড়া আবার কে। আমার আশেপাশের বড় বড় মাথারাই যে আমাকে উপদেশ দিয়ে ডুবিয়েছে তার তো আর প্রমাণের কিছু নাই। আর আরেকটা কথা বলে রাখি, আমার উপদেশগুলো কিন্তু এই পয়েন্টের মধ্যেই পড়ে।