ফিকশন

লুডু খেলতে খেলতে বাঙালির আত্মপরিচয় সম্পর্কে কি বললেন সিরাজ।। সিরাজের দরবার।।

অতঃপর শব্দায়ন

বাঙালীর আত্মপরিচয় কি তাদের জনপ্রিয় দুই খেলা হাডুডু আর লুডুর নিয়মের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়? নবাব আর তিতুমির লুডু খেলতে খেলতে লুডু ও বাঙালীর আত্মপরিচয়ের সেই মিলগুলো নিয়ে আলোচনায় ব্যাস্ত। শুধু তাই নয়, আলোচনার শেষ পর্যায়ে লুডু খেলায় কোন দেশ চ্যাম্পিয়ন হতো সে বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছায় নবাব ও তিতুমির!

লুডু খেলতে খেলতে বাঙালির আত্মপরিচয় সম্পর্কে কি বললেন সিরাজ।। সিরাজের দরবার

-অনেকদিন পরে আসলাম জাহাঁপনা।
এসে যখন গেছোই চলো একবার খেলে ফেলি।
-কি খেলা জাহাপনা?
বাঙালির প্রাণের খেলা। যেটা বাঙালি খেলতে বেশ পছন্দ করে। আসো...আসো... বুঝলে তিতু, বাঙালীর আত্মপরিচয় এর সব থেকে বড় প্রমাণ হয়ে আছে। তার জাতীয় খেলা হাডুডু, আর জনপ্রিয়তম খেলা এই লুডুতে। -কেমন করে জনাব!
এই দুটি খেলার নিয়মের দিকে তাকালে একটি জিনিসের মিল পাবা। সেটা হল নিজে জিততে হলে অন্যকে আটকাই দিতে হবে, খেয়ে দিতে হবে শুয়ায় দিতে হবে। অন্যকে কুপোকাত করলেই, করতে পারলেই নিজে জিতে যাওয়া যাবে।
-বেশ বলেছেন নবাব সাহেব। খাসা কথা!!
এ দুটি খেলার নিয়মিত চর্চা কিন্তু বাঙালি তার সকল আচার-আচরণ কাজ-কর্ম করে থাকে। বর্ষাকাল আসলেই দেখবে নতুন নতুন সব রাস্তাঘাট খুড়ে খুড়ে একাকার। প্রথমে রাস্তাঘাট খোঁড়া হবে সুয়ারেজ লাইন ঠিক করার জন্য। সুয়ারেজ লাইন ঠিক করে তারপর আবার ফিটফাট করে রাস্তা তৈরি করা হবে। তারপরে গ্যাসের লোকজন এসে সেই একই রাস্তা আবার খুঁড়বে গ্যাসের লাইন ঠিক করার জন্য। তারপর আসবে পানির লোকজন। এভাবে সারা বছর রাস্তা খুঁড়াখুঁড়ি চলতেই থাকবে। অন্যদিকে কিছু মানুষের বাড়ি-গাড়ি হয়ে যাবে। এই যে, কিছু মানুষের বাড়ি-গাড়ি হলো এতে তো তার উন্নতি হলো। এবার এটাকে বৈধ করার জন্য আছে মাথাপিছু আয়ের ক্যালকুলেশন। বছর শেষে দেখা যাবে, দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। তার মানে উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু গরিবের সংখ্যা, ভূমিহীনদের সংখ্যা, না খেয়ে থাকা মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই থাকবে।

-কিন্তু জাহাপনা, আমি তো লুডু খেলার মাজেদা একটু অন্যভাবে দেখি।
কিরকম… কিরকম…
-এই যে খেয়ে দেওয়ার বিষয়টা, সেটা তো ধর্মে ধর্মেও হয় নাকি! এই যে, ধরুন আপনি গুটিতে ছয় তুললেন মানে আপনি শক্তিশালী, আপনি আবার চালতে পারবেন। সুযোগ সময় মত খেয়ে দিতে পারবেন।

তা পারি। কিন্তু এর সাথে ধর্মের সম্পর্ক কি?
-আছে জাহাপনা! ধর্ম ও তো এক একটা গুটির চাল, একেক ধরনের রং আলাদা, একেক গুটির মতো। যখন যে শক্তিশালী সে সবাইকে খেয়ে দিবে, আর যে দুর্বল সে কিছু করতে পারবে না। আমাদের সময় তো আমরা খেয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি। আর এখন তো খাওয়া-খাওয়ি আরও ভয়াবহ আকারে চলছে।

তুমি আর ভালো হলে না মাসুদ!!
-মাসুদ?
ও!!! তুমি আর এর মধ্যে থেকে বের হতে পারলে না তিতু।
-আমি তো বের হয়ে গেছি জনাব কিন্তু আমার আমাকে যে ফলো করা ছাড়ে না।
তুমি কোন ব্যবস্থা নিতে পারো না?
-কি যে বলেন হুজুর! থুথু একবার মুখ থেকে ফেলে দিলে সেটাকে কি আবার মুখে নেওয়া যায়? মানে, গুটি একবার টান দিলে, খেয়ে দিলে সেটা আবার কিভাবে ফেরত নেবেন। নতুন করে জন্ম নিয়ে তারপর আবার খেলা শুরু। আর যতদিন ছক্কা নাই ততদিন ঘরে বসে থাকো।

হুম, তোমার কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু একটা বিষয় ভেবে আমি শিহরিত। বাঙালির প্রাণের খেলা এই লুডুকে ইংরেজরা তাদের নিজের নামে পেটেন্ট করে নিয়েছে। কিন্তু তারা এই খেলার চর্চা নিয়মিত করেনি। বাঙালিরা করেছে। যদি ইংরেজরা এই লুডু খেলা নিয়মিত চর্চা করতো, তাহলে আজকে বাঙালির যেই হুজুগে-গুজুগে যে অবস্থা সেটা হত ইংরেজদের। আর বিশ্ব লুডু চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত আমার এই বাংলা।

-জাহাপনা, হয়তো লুডু খেলায় চ্যাম্পিয়ন হতে পারতেন। কিন্তু বেশি দিন ধরে রাখতে পারতেন না।
ওই!! কেন...কেন...
-পাশের দেশের যে অবস্থা তাতে তো মনে হয় বাঙালীর চেয়ে ভারতবাসীরাই লুডু খেলায় পারদর্শী বেশি। তারাই হয়তো লুডু খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত। ভারতবর্ষে খাওয়া-খাওয়ি এখন সবচেয়ে বেশি চলছে এই যে মণিপুর মিজোরাম খেয়ে দাও, কাশ্মীর বাড়ি খেয়ে দাও, আধার কার্ড নাই খেয়ে দাও।

হুজুর হাজির ।। সিরাজের দরবার ।।
ফিকশন
কী উপায় জাঁহাপনা ।। সিরাজের দরবার ।।
ফিকশন
রকমারি বোকামি ।। সিরাজের দরবার ।।
ফিকশন
বাঙালীর তৃতীয় হাত ।। সিরাজের দরবার ।।
ফিকশন