ফিকশন
সমুদ্র পাড়ে পশুপাখি প্রেমী কার সাথে দেখা হলো সিরাজের।। সিরাজের দরবার।।
অতঃপর শব্দায়ন
হঠাৎ করে একদিন ঋৎসাগর পাড়ে সিরাজের সাথে জীবন বাবুর দেখা। জীবন বাবুকে দেখা মাত্রই নবাব সিরাজ নানা ধরনের প্রশ্ন করতে শুর করলো। আর এইসব প্রশ্ন-উত্তরের গ্যারাকলে আলোচনা হতে থাকলো দৈনন্দিন জীবনের নানা ঘটনা। এইসব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হতে চাইলে দেখুন এই পর্ব ‘হায় কবি, হায় সিরাজ’।
সমুদ্র পাড়ে পশুপাখি প্রেমী কার সাথে দেখা হলো সিরাজের।। সিরাজের দরবার।।
হ্যালো বন্ধুরা, সবাইকে সিরাজের দরবারে স্বাগতম, খোশামদেদ। আমি সিরাজ। আজকে এমন একজনের কথা বলব জীবদ্দশায় যার সাথে আমার দেখা হয়নি। তিনি একজন কবি, অতৃপ্ত কবি। তিনি একাধারে পশুপাখি প্রেমী, প্রকৃতিপ্রেমী, আবার পেক-কাদা, শামুক, পেঁচা প্রেমীও। কিন্তু যেভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে সেটা ইতিহাস। এই কবি সাহেবকে পছন্দের কারণ তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু। এই যেমন ধরেন, ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে’। যেন আমার জন্য লেখা।
আর এই যে, আমি এসে গেছি, মানে ভিডিওতে আর কি। যাই হোক, তার এই ফিরে আসার আইডিয়াটা কিন্তু সেই!! যখনই তাঁর এই কবিতাখানা পড়লাম তখনই তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ভালোবাসা বেড়ে গেল। আহ!! কি লেখা!! আবার আসিব ফিরে। আমার তো মনে হয় উনি একজন জ্যোতিষী। কিন্তু এ বাঙালি চিনল না তারা আসল জ্যোতিষীকে, আসল কবিকে, আসল নবাবকে। তো তার এই কবিতার পরবর্তী লাইনগুলো পড়ে আমি আরো অবাক। আমার নানা সাহেব নবাব আলীবর্দী খাঁর সাথে তাঁর বেশ মিল। আমার নানা সাহেবও পশুপাখি পছন্দ করতেন। আর আরবি ঘোড়াসহ তার সংগ্রহশালায় আরও কত কি যে ছিল! কিন্তু শালিক ছিল না, শঙ্খচিল ছিল না। এই কবি সাহেব আবার শালিক-শঙ্খচিল পছন্দ করতেন। কারণ তিনি গরীব। তবে আমার নানা সাহেব যদি হতেন তাহলে তিনি তার কবিতায় আরবি ঘোড়া, আফ্রিকান সিংহ এসব কিছু লিখে যেতেন। আমার নানা সাহেবের সাথে এই কবি সাহেবের আরও একটি পার্থক্য হল; আমার নানা সাহেব এ পশুপাখি গুলো পুষতেন। আর কবি সাহেব পরজন্মে পশুপাখি হতে চাইতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, কবি সাহেবের। তিনি আর পাখি হয়ে উড়তে পারলেন কই! অপঘাতে মরে এই ঋত্বায়নের বাসিন্দা হলেন। তবে এখন আর তিনি কবিতা-টবিতা লেখেন না, কিন্তু ভাবেন। আমার আবার এসব ভাবুক-টাবুকদের খুব একটা পছন্দ না। কিন্তু এই কবি সাহেবকে পছন্দের কারণ তার কবিতায় মানে কাব্য পাঠে আমার বাংলায় ফিরে যাওয়ার বা বাংলাকে ভালোবাসারই কথা যেন শুনতে পাই। তো, সেদিন হৃৎসাগর পাড়ে কবি সাহেবের সাথে দেখা।
সালাম নবাব সাহেব।
-আরে জীবন বাবু যে! ভালো সময় দেখা হল।
সময়ের তো কোন ঠিক নেই নবাব সাহেব। এই যে ট্রামের সঙ্গে আমার সময় মিলল না। পাঠকের সঙ্গে আমার সময় মিলল না। এই না মেলাটাই সৌন্দর্য। এই না মেলটাই জীবন, আবার এই না মেলাটাই মৃত্যু।
-বাহ! ভালো বলেছেন কবি সাহেব। তবে আপনার কাছে আমার একটি জানার আছে। সেটি হল আপনি সারা জীবনের শান্তি না চেয়ে দুদণ্ড শান্তি চাইলেন কেন?
বাঙালি তো তাই বেশি চাইতে ভয় লাগে। বেশি চাওয়া মানেই বেশি পরিশ্রম। তাই দুদণ্ড শান্তি চেয়েছি আর কি! -আচ্ছা আপনি তো পশুপ্রেমী, পাখিপ্রেমী আবার পাঁক-কাদা-পেঁচা দেখা কবি। তা আপনি আবার বাংলায় ফিরে যেতে চান কেন!
-বাঙালিরা মূর্খ, আমার প্রতিভার মূল্য দিতে পারেনি। তাই কবিতায় কবিতায় ভয় দেখিয়ে এসেছি।
বাহ!! কি মিল আপনার আর আমার।
-আরও মিল আছে নবাব সাহেব! ওই যে আলেয়া আর বনলতা।
এর মধ্যে আবার আলেয়ার কথা আসছে কেন? আচ্ছা কবি সাহেব এই যে, আপনার কবিতা নিয়ে এত মাতামাতি এটা কি আপনার ভালো লাগে?
-ভালো লাগে বৈকি! তবে কি নবাব সাহেব একটা গোপন কথা বলব?
বলুন বলুন নির্দ্বিধায় বলে ফেলুন।
-আসলে আমার কবিতাগুলো আমার খুব একটা পছন্দ না। একবারের বেশি দুবার কখনো পড়ি না।
কে আর নিজের জিনিস নিজে পছন্দ করে বলুন।
-ঠিক বলেছেন নবাব সাহেব।
এই যে সেদিন একটা খোলা বুক দেখলাম! দেখে তো আমি শিহরিত। সেটা হল ফেসবুক। বাঙালিরা অন্য সব বই পড়া বাদ দিয়ে ফেসবুক নিয়েই আছে। খুব চলে তবে এটা যে বানিয়েছে সে নাকি ফেসবুক ব্যবহার করে না।
-ঠিক শুনেছেন। আসলে যে যেটা বানায় সে সেটা নিজে পছন্দও করে না ব্যবহারও করেনা। এই যে কাল মার্কস, তিনি তো নিজেই মার্কসবাদী না। আর আমাদের রবি বাবু কত কথাই তো লিখে গেলেন। কিন্তু তিনি কি সব মানতেন। আর ওই যে হিমু নামের একটা চরিত্র বানালেন আমাদের হুমায়ূন সাহেব। পোলাপানরে বাউলা করে দিলেন। কিন্তু নিজের ক্যারিয়ার ঠিকঠাক।
আসলে হয়েছে কি নবাব সাহেব সবাই পাবলিকের জন্য কিছু একটা বানায়। পাবলিকও খায় বেহুদা। তবে এটা যে করে সে নিজেরটাই আগে চিন্তা করে। আপনার কথাই ভাবুন আপনি কি সিরাজের দরবারে দেখেন?
আমার কথা আবার এখানে আসছে কেন? আচ্ছা কবি সাহেব, চলুন চলুন আমরা সমুদ্র দেখি। হ্যাঁ হ্যাঁ আসেন।
তো অনেক কথাবার্তা হল। তবে জীবনানন্দ যাওয়ার পর একটা বিষয় আমার মাথায় আসলো তাই তাকে আবার আসতে বলেছি। তার মহিনের ঘোড়াগুলো কেন ঘাস খায়? কতগুলো ঘোড়া? সেটা জানার জন্য। আমার মনে হয় কি, এই মহিনটা দুইটা কারণে ঘোড়া পুষতো আর ঘাস খাওয়াতো।
এক, ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ করবে বলে অথবা ইংরেজদের কাছে বেশি দামে ঘোড়া বিক্রি করবে বলে ঘোড়াগুলো পুষছিল। আর এই ঘোড়াগুলোকে তরতাজা করার জন্য যে ঘাস খাওয়াতো সেটা তো আর বলার দরকার নাই। তো বন্ধুরা, আজকের মত এখানেই বিদায়। দেখা হবে পরবর্তী কোনো শুক্রবার, ঠিক রাত দশটায়।