ফিকশন

অভিযোগবাজ।। সিরাজের দরবার।।

অতঃপর শব্দায়ন

সুযোগ পেলেই বাঙালী যে অভিযোগ দেবে এ আর নতুন কী? নিজে কিছু করবে না শুধু অভিযোগ অভিযোগ আর অভিযোগ। তাও না হয় মেনে নেয়া যায়, কিন্তু অভিযোগের পরেই যেটা করবে সেটা হলো উপদেশ! ব্যতিক্রম নেই সিরাজের দরবারের বেলাতেও। ‘অভিযোগবাজ’ বাঙালীদের নিয়েই এবারের দরবার!

অভিযোগবাজ।। সিরাজের দরবার।।

হ্যালো বন্ধুরা সবাই কি সিরাজের দরবারে স্বাগতম। খোশ আমদেদ, আমি সিরাজ। নবাব হলেও আমি তো মানুষ এই মানুষের কথা ভেবে হাত থেকে তরবারি ছেড়ে মাস্ক নিলাম আর বললাম, ওসির থেকে মশি আর মশির থেকে মাস্ক বেশি ক্ষমতাবান। কিন্তু বাঙালির কথা বুঝল না। আরে ভাই, আমি তো আপনাদের জন্য এসব ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করি। কিন্তু আপনারা... আপনারা আমার পোস্টে মতামত দিলেন ভুয়া নবাব, ভাষা কঠিন, আরো মজা চাই, আলেয়া কোথায়, এরকম নানা রকম উপদেশ আর অভিযোগের টালি। বাঙালি সুযোগ পেলে যে অভিযোগ দেবে এ আর নতুন কি! নিজে কিছু করবে না, শুধু অভিযোগ... অভিযোগ... অভিযোগ।

সেও না হয় মেনে নেওয়া যায় কিন্তু অভিযোগের পর যেটা করবে সেটা হলো উপদেশ। বলবে রাস্তাটা এখান দিয়ে করা ঠিক হয়নি গাছ বাঁচাতে হইত, আবার গাছ বাঁচিয়ে রাস্তাটা একটু ঘুরাইয়া নিয়া আসলে বলবে খামাখা পয়সা খরচ করে বেকাত্যারা রাস্তা বানাইছে। গাছ কয়েকটা কাইটা ফালাইলে কি এমন ক্ষতি হতো।

একজন তরুণ চলচিত্র নির্মাতা, তার একটি সিনামা কান চলচিত্র উৎসবের জন্য নির্বাচিত হয়েছে এতেও বাঙালি কোচকাবে। মানে বাঙালি উপদেশ আর অভিযোগ দেবে বলবে আমরা কেন আগে এই সিনামাটা দেখতে পারলাম না? কেন এই সিনামার ট্রেলার কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না? কেন এদেশে সিনেমাটি প্রথম মুক্তি দেওয়া হয়নি? কিন্তু এই যে একটি বাংলা সিনেমা কান চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য নির্বাচিত হলো, এটি এই বাঙালির জন্য কতটা গর্বের সেটা বাঙালি বুঝতে পারল না। নিজেরটা ভাবে না, নিজে সিনেমা হলে যাবে না। সিনেমা হল দর্শকদের অভাবে বন্ধ হয়ে যাক, কিন্তু এই বাঙালি উপদেশ আর অভিযোগ দিয়েই যাবে।

আর একটা দল আছে যাদের বলা হয় চলচ্চিত্র সমালোচক। তাদের কাজ ওই একই অভিযোগে উপদেশ দেওয়া। পারলে তারা পরিচালকের ঘাড় মটকায়, অভিনেতার ঘাড় মটকায় এবং যদি সুযোগ পায় তাহলে চলচ্চিত্রের সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের পেছনে বাঁশ আর হাতে লন্ঠন ধরিয়ে দেয়। রাস্তায় অ্যাক্সিডেন্টে কেউ মারা গেলে ড্রাইভারের দোষ না পথচারীর দোষ সেটা বলে বলে গলা ফাটাবে। কিন্তু রাস্তা ঠিক করা সেইসাথে গাড়ির ফিটনেস ঠিক করার জন্য কোন প্রতিবাদ করবে না। আন্দোলন... সে তো হঠাৎ করে শুরু হয়। বিশেষ করে ঈদের পর। তারপর আবার ফুশশ... এইযে, ছোট ছোট বাচ্চারা রাস্তায় নেমে দেখিয়ে দিল কিভাবে রাস্তায় চলাফেরা করতে হয়। সেটাও বাঙালি মনে রাখল না। সে সময় আবার উপদেশ নিয়ে আসলো বাচ্চারা তোমরা স্কুল-কলেজে ফিরে যাও!

আর তাদের পিতামাতা আর শিক্ষকদের অভিযোগ করল তারা, নাকি বাচ্চাদের কন্ট্রোল করতে পারে না, ঘরে রাখতে পারে না। অথচ সেই সময় এই বাচ্চাদের আন্দোলনের সাথে যদি বাঙালিরা একাত্ম হয়ে প্রতিবাদ করত তাহলে এই ঋত্বায়নে বাঙ্গালীদের হাহুতাশে আমি ক্লান্ত হয়ে যেতাম না। এ ঋত্বায়নে অতৃপ্ত আত্মারা আসে। যারা এক জীবনে শান্তি মতে জীবন-যাপন করতে পারেনি তারা, আর যারা হঠাৎ করে বাধ্য হয়ে মরে তারা। এ ঋত্বায়নে রোড এক্সিডেন্টে মরে সবথেকে বেশি আসে বাঙালি আর আত্মহত্যা করে আসে জাপানি। এ বাঙালিদের কাছ থেকেই আমি দেশের আপডেট পাই, তাদের কথা শুনে শুনেই এই ভিডিও ব্লগিং তৈরি করতে বাধ্য হই। আমার কাজ হলো বলে যাওয়া, নিজের মতামত দেয়া। সেটা আমি করেই যাব তবে বাঙালির চিরাচরিত স্বভাবের দাস হয়ে কোনো উপদেশও দিতে যাব না, কোনো অভিযোগও করতে যাব না।

হুজুর হাজির ।। সিরাজের দরবার ।।
ফিকশন
কী উপায় জাঁহাপনা ।। সিরাজের দরবার ।।
ফিকশন
রকমারি বোকামি ।। সিরাজের দরবার ।।
ফিকশন
বাঙালীর তৃতীয় হাত ।। সিরাজের দরবার ।।
ফিকশন