ফিকশন
বাঙালী চরিতামৃত ।। সিরাজের দরবার ।।
অতঃপর শব্দায়ন
অনেকেই বলেন, বাঙালী কখন কী যে করে ফেলে তা বুঝে ওঠা অনেক মুশকিলের বিষয়। বাঙালী চরিত্র নাকি এক আজব রহস্য! আমাদের অতি উৎসাহী নবাব সেই মুশকিল আসান করে ফেলেছেন। জানতে দেখুন ‘বাঙালী চরিতামৃত’!
বাঙালী চরিতামৃত।। সিরাজের দরবার।।
হ্যালো বন্ধুরা! সবাইকে সিরাজের দরবারে স্বাগতম। খোশ আমদেদ। আমি সিরাজ। বাঙালীর কি এমন বিশেষ গুণ আছে যা তাকে পৃথিবীর অন্য সকল জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা করেছে? বা বাঙালী কোন কাজটা করতে সবথেকে বেশি পছন্দ করে, এনি আইডিয়া? হে হে... আমি আপনাদের কিছু হিন্টস দেই। এই কাজটি বাঙালী বেশ ধারাবাহিকভাবেই করতে পারে, এই কাজের ক্ষেত্রে বাঙালী অতুলনীয়। কি ভোতা মগজ থেকে কিছুই বের হচ্ছে না, তাইনা? আমিই বলি।
বাঙালীর এই অসাধারণ গুণটি হল বা বাঙালী যে কাজটি করতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে সেটি হল পরনিন্দা, পরচর্চা। অন্যের দোষ খুঁজে বের করার অদম্য মানসিকতা। এই যে আমি, আমার কথাই ধরুণ। ইংরেজ ইতিহাসবিদরা আমার চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে সেটাই স্বাভাবিক। তা না হলে তাদের কৃতকর্মের জাস্টিফিকেশন হবে কি করে? কিন্তু ইংরেজদের সেসন প্রোপাগান্ডা বাঙালীরা সেসময় বিশ্বাস করে। বিশ্বাস করে বলতে থাকে আমি নাকি নবাব হিসাবে ভাল না, ভাল প্রশাসক নই। আমি নাকি চরিত্রহীন, লম্পট, বর্বর, খুনি। আমি নাকি মদ খাই, মাতাল। আমি নাকি অন্য নারীগমন করি। আমার নাকি বুদ্ধি কম। আমি নাকি বদমেজাজী। আর এসব কারণেই নাকি আমি পলাশীর প্রান্তরে পরাজিত হয়েছি। কিন্তু, কিন্তু, পলাশীর প্রান্তরের ঘটনার আসল কারণ খুঁজে বের না করে বাঙালীরা সেসময় ইংরেজদের প্রোপাগাণ্ডার ওপর ভিত্তি করে আমাকেই দোষারোপ করা শুরু করল। এমনকি ১৭৫৭ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত যতবার আমাকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে তার বেশিরভাগ সময়ই বলা হয়েছে আমি চরিত্রহীন, মাতাল, লম্পট ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু, কিন্তু, এই পুরো ঘটনার ভুক্তভোগী ছিলাম আমি। এই যে ভুক্তভোগীর দোষ খুঁজে বের করা এবং তার সাথে হয়ে যাওয়া অত্যাচার অবিচারকে ছোট করে দেখা, ধামাচাপা দেওয়ার যে চেষ্টা, এমনকি ভুলে যাওয়ার যে প্রক্রিয়া একেই বলে ভিক্টিম ব্লেইমিং। এরপর যারা আসল হোতা বা নাটের গুরু তারাই থেকে যায় সবকিছুর আড়ালে। আর যারা ভুক্তভোগী, মানে আমি, তাদের ঘাড়ে সব দোষ গিয়ে পড়ে।
আপনাদের চারপাশে তাকিয়ে দেখেন। এই তো সেদিন, গুলশান না কি যেন সেখানে একটি মেয়েকে ফ্ল্যাটে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল বা মেরে ফেলা হল এই খবরটি যখন চারদিকে ছড়িয়ে পরে তখন ওই মেয়েটির দোষ খুঁজে বের করাই যেন সকলের কাজ হয়ে দাঁড়ায়। তারা এটা প্রমাণ করতে চেষ্টা করে যে মেয়েটি ছিল চরিত্রহীন, টাকা ক্ষমতার জন্য এমন কোন কাজ নেই যেটি সে করেনি। এমনকি সে নাকি তার নিজের হত্যার জন্য নিজেই দায়ী। এই যে বাঙালীর পরনিন্দা, পরচর্চা বা ভিক্টিম ব্লেইমিংকে আর উস্কিয়ে দেওয়ার জন্য এই ঘটনার যারা মূল হোতা বা নাটের গুরু, তারা তাদের লালন পালন করা টিভি চ্যানেল, নিউজ পোর্টাল, রেডিও, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা ধরণের মিথ্যাচার প্রোপাগাণ্ডা প্রচার করতে থাকে। এতে বাঙালীর পোয়াবারো। কর আরও পরনিন্দা, পরচর্চা কিংবা ভিক্টিম ব্লেইমিং। শুধু টেলিভিশন বা সোশ্যাল মিডিয়া নয়, ওই যে যারা এই ঘটনার মূল হোতা, তাদের আছে ইনফ্লুয়েন্সার- টাকা দিয়ে যাদের মুখের কথা কেনা যায়। তো এই বাঙালীরা হচ্ছে এমন, ধরুন আপনি এভারেস্ট জয় করলেন বা পাতালে গিয়ে মণি-মুক্তো নিয়ে আসলেন, আপনার হঠাৎ কোন কাজ লক্ষ প্রাণ বাঁচিয়ে দিল বা আপনি এমন কোন কাজ করলেন যেটা বাঙালীর ইতিহাসে কেউ কখনও করতে পারেনি। তবুও, তবুও এই বাঙালী যখন আপনাকে নিয়ে আলোচনা করবে তখন নির্দ্বিধায়। আপনার চরিত্রের যত নেতিবাচক দিক আছে সবগুলো কেটে কেটে জোড়া লাগিয়ে আপনার এমন এক চরিত্র দাঁড় করাবে যেটাকে আপনি নিজেও চিনতে পারবেন না।