ফিকশন

কাজ্ঞাভ্যাক্স ।। সিরাজের দরবার ।।

অতঃপর শব্দায়ন

গুরুত্বপূর্ণ দলিলে ভাষা না বুঝেই বাঙালী স্বাক্ষর করে দিতে পারে! এই স্বাক্ষরের ওপর কোটি মানুষের জীবন নির্ভরশীল জেনেও বাঙালী কেন এমন আচরণ করে যা সারা পৃথিবীতে ইউনিক? আমাদের নবাব এটাকে আবেগী জায়গা থেকে দেখতে নারাজ। তিনি হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা বাঙালীর মানস-গঠন বৈজ্ঞানিক পন্থা অবলম্বনে বিশ্লেষণ করেছেন। বাঙালীর ভাবনা ও চিন্তার গরিবীর আসল কারণ বের করেছেন এই পর্বে।

কাজ্ঞাভ্যাক্স।। সিরাজের দরবার।।

হ্যালো বন্ধুরা! সবাইকে সিরাজের দরবারে স্বাগতম। খোশ আমদেদ। আমি সিরাজ। অনেকদিন ধরে একটা গবেষণা চালাচ্ছি যে বাঙালির কি নেই? মানে এই অথর্ব, তামাশাখোর, বেকুব, গুজবপ্রিয় বাঙালির কি নেই? কেন সে বুদ্ধিমান মানুষের মত আচরণ করতে পারেনা? তো আমার গবেষকরা এর কারণ বের করার জন্য এমন কোন পদ্ধতি নেই যেটা অবলম্বন করেনি। কোয়ালিটিটিভ, কোয়ান্টিটিটিভ, সার্ভের মত জটিল জটিল সব পদ্ধতি অবলম্বন করে আমার গবেষকটা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হলেন যে, বাঙালি জাতির আসলে কমনসেন্স মানে কাণ্ডজ্ঞান নেই। বাঙালির যে কাণ্ডজ্ঞান নেই তার হাজার হাজারটা প্রমাণের মধ্যে পলাশীর প্রান্তরের ঘটনা তো আছেই, সেই সাথে আছে গুজবে বিশ্বাস, ভূতপ্রেতে বিশ্বাস, ললাট লিখন, ইংরেজি ভাষার প্রতি অগাধ ভালবাসা, ইংরেজদের ডাংগুলি খেলা, সেটার মধ্যে আবার দেশপ্রেম, লিচু গাছে আম, বিল গেটসের বিবাহবিচ্ছেদ, শব্দবোমা, কোন অভিনেতা কার সাথে গেল, কার সাথে শুলো... আহ! মানে খেলো, এসব সহ আরও হাজার হাজার। একটা মহাফেজখানা তৈরি করেছি বাঙালির এসব বেকুবিপনার। তো আমাদের প্রথম ধাপের গবেষণা শেষ, ফাইন্ডিংসও পেলাম। এবার দ্বিতীয় ধাপে গবেষণা শুরু, এ সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে সেটা নিয়ে। তো আমাদের গবেষকরা অনেক ডেটা এনালাইসিস, অনেক এক্সপেরিমেন্ট করে এই সিদ্ধান্তে আসল যে, বাঙালি জাতিকে যদি শিশু বয়সে কাণ্ডজ্ঞানবর্ধক কোনো ভ্যাক্সিন দেওয়া যায় তাহলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এই ভ্যাক্সিন দেয়ার প্রক্রিয়াটা, মানে নিয়মটা অনেকটা এইরকম যে বাঙালি জাতিকে ৫ বছর বয়স থেকে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রত্যেক বছর প্রথম অমাবস্যার দিন একটি করে মোট ছটি ডোজ দিলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ইতোমধ্যেই কাণ্ডজ্ঞানবর্ধক ভ্যাক্সিন, মানে কাজ্ঞাভ্যাক্স তৈরি করার জন্য বিজ্ঞানীদের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের কাজ চলমান। আমরা আশা করছি আগামী দ্বাদশতম বাংলা নববর্ষের পূর্বেই পৃথিবীর সাথে সরাসরি যোগাযোগের একটা মাধ্যম খুঁজে পাব। সেইসাথে পণ্য আদান প্রদানেরও একটা উপায় খুঁজে বের করব। আমাদের পরিচিত এক খান সাহেব আছেন যিনি ক্রসবর্ডার ডেলিভারির কাজ করেন। তার সাথে বসে ক্রসস্কাই ডিস্ট্রিবিউশনটা ঠিক কি হতে পারে সেটার একটা সমাধান বের করা যাবে। আমরা ভাবছি WHO এর সাথে একটা চুক্তি করবো, সেই সাথে চীনকে স্ট্র‍্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে নিয়োগ দিবো। আমাদের বিশ্বাস শুধু ভ্যাক্সিন তৈরি আর বিতরণ নয়, ভাইরাস তৈরি এবং ছড়িয়ে দেওয়ার কাজেও চীন বেশ পারদর্শী। আমাদের ধারণা শুধু বাঙালি নয়, আরও অনেক জাতি আছে যাদের কাছ থেকে এই ভ্যাক্সিনের চাহিদা পাব। এই ব্যপারে ইবনে বতুতার সাথে আলোচনা করা যেতে পারে, তবে দুঃখের ব্যাপার হলো যতদিন পর্যন্ত এই কাণ্ডভ্যাক্স বাজারে এভেইলেবল না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এই তামাশাখোর, গুজবপ্রিয় অথর্ব, বেকুব বাঙালির আক্কেল আচরণ যা আচরণ যা আছে সেটা মেনে নিয়ে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।

হুজুর হাজির ।। সিরাজের দরবার ।।
ফিকশন
কী উপায় জাঁহাপনা ।। সিরাজের দরবার ।।
ফিকশন
রকমারি বোকামি ।। সিরাজের দরবার ।।
ফিকশন
বাঙালীর তৃতীয় হাত ।। সিরাজের দরবার ।।
ফিকশন