ফিকশন
রকমারি বোকামি ।। সিরাজের দরবার ।।
অতঃপর শব্দায়ন
মানুষের স্মৃতি আর বাঙালীর স্মৃতির মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। বাঙালীর স্মৃতি অনেকটা গোল্ডফিশের মতো। ক্রমাগত ভুলে যাওয়া স্বভাব। নাকি এটা তাঁর স্বইচ্ছায় স্বার্থপরতা? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কেন বলতে হয়, “রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করোনি!”
রকমারি বোকামি।। সিরাজের দরবার ।।
হ্যালো বন্ধুরা! সবাইকে সিরাজের দরবারে স্বাগতম। খোশ আমদেদ। আমি সিরাজ। আমরা যে কত ধরণের বোকামির মধ্যে আছি তারই কিছু কথা আজকে বলার আশা রাখি। সকল বোকা যদিও বোকা হয়, বোকা সাজার করে ভান। কিছু বোকা আস্ত বোকা, দিয়ে দেয় নিজের জান। তেমনই দুই বোকার সাথে সেদিন দেখা। একজন হল আমাদের ক্ষুদিরাম, আরেকজনের সাথে নতুন পরিচয়, নূর হোসেন নাম। তো ক্ষুদিরাম এল সেদিন, সাথে তার নূর হোসেন। আমার তো নতুন দেখা তাই একটু আগ বাড়িয়েই পরিচিত হলেম। নূর হোসেনের বীরত্বের কথা শুনে শিরদাঁড়া সোজা। এমন খাঁটি দেশপ্রেম দেখান নয় সোজা। কি সাহস! মিছিলের সামনে চলে গেল খালি গায়ে। দেশের জন্য জীবন দিল তন্ত্রমন্ত্র রক্ষ...মানে গণতন্ত্র রক্ষায়। আমি ভাবি অন্য কথা। কি দরকার ছিল আত্মঘাতী হওয়া একা একা? সময় নিতে, সংঘবদ্ধ হতে। তা ছাড়া ছিল আরেক উপায়, নেতাকেই মিছিলের সামনে এগিয়ে দিতে। বলতে “ভয় নাই, নাই ভয়! আপনি অজয়, অক্ষয়!” দেখতে তোমাদের মহান নেতা তখন কি করে। আর যারা তোমাদের জানের দরে সিংহাসনে আসীন, তারা কি তোমাসের খোঁজ খবর নেয়? কেয়ার করে তোমাদের পরিবার পরিজন। যতই বল এগুলো স্বদেশপ্রেম, সময়ের দাবী, অনেক প্রয়োজন।
আর আছে কিছু না জেনে বোকা, তারা আজীবন খেয়েই গেল ধোঁকা। শুধু ভাবে ব্যাংক ব্যালেন্স আর স্ত্রীর গহণা। গরম ভাতের সাথে হালকা ঝোলে ভাসা রুই-কাতলা। আরও আছে ইংলিশ মিডিয়াম, কোম্পানির প্রতি অগাধ বিশ্বাস। মুরগির রানটাও ফ্রোজেন। বাতাবিলেবু চিনে না, বাজারে গিয়ে কিনে আনে এক কেজি নাশপাতি ফরেন। এরই মাঝে পেলাম নতুন এক প্রপোজাল। নাটক সিনেমার পর, আমাকে নিয়ে হবে নাকি ওয়েব সিরিজ। আমিও রাজি, করতে পারিনি খারিজ। কলকাতা বিজয় থেকে শুরু, আছে ক্লাইম্যাক্স, হিউমার, সাস্পেন্স। আলেয়া আছে, আছে আইটেম সং আর গোলাম হোসেন। সব মজাই নাকি হবে এই এক ওয়েব সিরিজে। পরিচালকের ইচ্ছা আছে, প্রযোজকের টাকা, চ্যানেলটা শুধু ঠিক হয়ে গেলেই ঘুরবে মজার চাকা। আমি আর বাধা দেই না কিছুতেই। যে যার মত ভাবে ভাবুক, লেখে লিখুক কল্পকাহিনী। কি আর আসে যায় তাতে! বাঙালি তো ইতিহাস থেকে শেখেনা কিছুই। নইলে কি মীরজাফর জন্ম নেয় মোস্তাক হয়ে বাংলাদেশের কুমিল্লায়? ডালিমরা ফিরে আসে মীর এর প্রেতাত্মা হয়ে ’৭৫ এর বাংলায়? ৫৭ এর পর ৭৫-এ এসে হয়ে যায় ইমোশনাল। জাতিটাই বেকুবের। তামাশাখোর দূরে দাঁড়ানো দর্শকের। কাজ একটাই, তালিয়া বাজাও। রবি বাবু, রেখেছ বাঙালি করে, অমানুষ করনি। তো হোক! হোক নতুন ওয়েব সিরিজ। নতুন একটা ইমেজ হোক। অভিনেতার বডি হোক জিমে যাওয়া শক্তপোক্ত, না থাকে না থাকুক ঘাড়ের ওপর একটা চিন্তাভাবনাময় মস্তিষ্ক। তো বন্ধুরা, আজকের মত এখানেই বিদায়৷ দেখা হবে সিরাজের দরবারে চতুর্থ পটলায়, মানে নেক্সট পর্বে আর কি।