ডকুমেন্টরি
বধ্যভূমি ।। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ।। ভাস্কর্যের শব্দায়ন ১২ ।।
অতঃপর শব্দায়ন
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমি অন্যতম। চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও নিস্তব্ধতার জন্য কেউ কল্পনাও করতে পারবে না কতো শহীদের এখানে শেষ আশ্রয় হয়েছে!
“১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ঘাতক পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে যাঁরা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, সেই সব মৃত্যুহীন শহীদ এই গণকবরে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। বাঙালি জাতি তাঁদের অমর স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করছে।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমিতে ঢুকতেই স্মৃতিফলকে চোখে পড়ে লেখাগুলো। নাম না জানা কতো শহীদের আশ্রয় এই গণকবরে হয়েছে তার সঠিক হদিস এখনো আমাদের অজানা। মানুষ কতোটা বর্বর হতে পারে, কতোটা হিংস্র হতে পারে তার নজির পাক হানাদার বাহিনীর এই বাংলার মাটিতে দেখিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর এতো বড় নরসংহার কোনো একক দেশে সংগঠিত হয়নি।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমি অন্যতম একটি। চারপাশের ফুলগাছ ও নিস্তব্ধতা দেখে কেউ কল্পনাও করতে পারবে না কতো শহীদের রক্তে এই মাটি রঞ্জিত হয়েছে। পাক হানাদারেরা দীর্ঘ ৯ মাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলকে ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করেছিল। ১৯৭২ সালের ২৩ এপ্রিল হলের পূর্ব কোণের আধা মাইল দূরে আবিষ্কৃত হয় গণকবরটি। প্রতিদিন অগণিত নারী-পুরুষকে হাত বাঁধা অবস্থায় হত্যা করে এই বধ্যভূমিতে ফেলে দিত পাকিস্তানি সেনারা । সেইসব শহীদের প্রকৃত সংখ্যা ও তাদের নাম আমাদের কাছে এখনো অজানাই থেকে গেছে। নাম না জানা সেই শত-সহস্র শহীদের স্মৃতি অম্লান করে রাখতেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয় বধ্যভূমিটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্থানে বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য ১৯৯৮ সালে সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল খালেক সরকারের নিকট সুপারিশ করেছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০০ সালের ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন উপাচার্য এম. সাইদুর রহমান খান এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এবং ২০০২ সালের ২১ ডিসেম্বর তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. রেদোয়ান আহমেদ নির্মাণ কাজ উদ্ভোধন করেন। বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভটি কংক্রিটের বেদি ওপর তৈরি করা হয়েছে। বেদির ঠিক মাঝখানে রয়েছে বড় একটি কূপ। কূপের মাঝখানে দণ্ডায়মান ৬ স্তরবিশিষ্ট ও ৪২ ফুট উঁচু একটি স্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে। স্তম্ভটির গায়ে রয়েছে কালো কালো দাগ, যা শহীদদের রক্ত শুকানো দাগের প্রতীক। বধ্যভূমির কূপটিকে মৃত্যুকূপের সাথে তুলনা করা যায়। এর সামনে দাঁড়ালেই অনুভব করা যায় কি রকম নির্মম হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছিলো সেই সময়।
ত্রিশ লক্ষ প্রাণের আত্মাহূতির ফলে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। রক্তের ঋণে আমাদের এই প্রাপ্তি। তাই তো বধ্যভূমির এই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে দাঁড়ালে শ্রদ্ধায় আনত হয় সমস্ত জাতি। শহীদের বলিদান আমাদের দেশপ্রেম শাণিত করে, উদ্বুদ্ধ করে দেশের কল্যাণে সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে।