ডকুমেন্টরি

স্মৃতি চিরন্তন ।। ভাস্কর্যের শব্দায়ন ০৪ ।।

অতঃপর শব্দায়ন

“স্মৃতি চিরন্তন”-এর পোড়া মাটির ফলকের ওপর শব্দগুলো যেনো আগুনের মতো জ্বলজ্বল জ্বলছে। কিছু শব্দ, কিছু স্তম্ভ আমদের দাঁড় করায় ইতিহাসের নির্মম সত্যের মুখোমুখি। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারিয়ে আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি। তাঁদের ত্যাগের কাছে শ্রদ্ধায় আনত হয় সমস্ত জাতির শিরোস্ত্রাণ। আমরা একই সাথে আশ্রয় ও প্রাণশক্তি খুঁজি তাঁদের ত্যাগের ভিতর। যে মানুষগুলোর ত্যাগ-তিতিক্ষা আমাদের দিয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীলক্ষেত-ফুলার রোডের সংযোগ স্থলে ত্রিভুজ আকারে গঠিত সড়ক দ্বীপে টেরাকোটা সংবলিত স্মারক নিদর্শন “স্মৃতি চিরন্তন” স্থাপিত হয়েছে। এর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ১৯৮৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনকালে তত্কালীন উপাচার্য এর স্মৃতিফলক নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন এবং ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্মাণ সমাপ্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ জন শিক্ষক, ১০৫ জন ছাত্র, ৩০ জন কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের ১০ জন, ১৭ জন প্রাক্তন কর্মচারী, শিক্ষক ও অফিসার-পরিবারের ৫ জন, ১ জন ডাক্তার (কর্মকর্তা), শহীদ মধুসূদন দে (মধুদা)-ও তাঁর পরিবারের ৩ জন শহীদ সদস্যসহ মোট ১৯৪ জন শহীদ হন। আরও নাম না জানা শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি। শহীদদের সেই সমস্ত অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতেই স্থাপন করা হয় “স্মৃতি চিরন্তন”।
মোট ১৪টি দণ্ডায়মান প্রাচীরের গায়ে স্থাপিত হয়েছে পোড়ামাটির ফলক, যার মধ্যে আকারে ৬টি ছোট এবং ৮টি অপেক্ষাকৃত বড়। বড় প্রাচীর খণ্ডগুলোর দৈর্ঘ্য ৬ ফুট এবং ছোট প্রাচীরগুলোর দৈর্ঘ্য ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি। ভূমি থেকে ৪ ফুট উঁচুতে পোড়ামাটির টেরাকোটা ফলকগুলো দেয়ালে স্থাপন করা হয়েছে।
পোড়ামাটির লালচে ফলকের উপজীব্য হিসেবে অলঙ্কৃত হয়েছে ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় অর্জনে আনন্দমিছিল। সমস্ত টেরাকোটাতে ছড়িয়ে আছে বৃক্ষ, নৌকা, বিচরণরত গরু, পাখ-পাখালি সংবলিত শান্ত প্রাকৃতিক আবহ, বাঁশিতে সুর তোলায় মগ্ন রাখাল, কলসি কাঁখে রমণী, পরাধীনতার প্রতীক শিকল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, লাঠি মিছিল, ৭ মার্চের ভাষণ, যুদ্ধরত বিক্ষুব্ধ জনগণ, বেয়নেট চার্জ, হাত ও চোখবাঁধা অবস্থায় অসহায় মানুষ, বধ্যভূমিতে ফেলে রাখা মৃত লাশের স্তূপ। এতোসব খণ্ড খণ্ড ছবির মাঝে জ্বলজ্ব করে জ্বলছে আমাদের জাতীয় পতাকা ও তার ভিতরে বাংলাদশের মানচিত্রখচিত সূর্য যা আমাদের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রতীক।

বাঙালি জাতির সকল আন্দোলন ও সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় কেন্দ্রস্থল হিসাবে হাজির হয়েছে। জাতির যে সূর্যসন্তানেরা আত্মাহূতি দিয়েছেন তাঁদের ত্যাগ-তিতিক্ষার গাথা আমাদের সামনে তুলে ধরে “স্মৃতি চিরন্তন”।

অপরাজেয় বাংলা ।। ভাস্কর্যের শব্দায়ন ০১ ।।
ডকুমেন্টরি
স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ।। ভাস্কর্যের শব্দায়ন ০২ ।।
ডকুমেন্টরি
স্বাধীনতা সংগ্রাম ।। ভাস্কর্যের শব্দায়ন ০৩ ।।
ডকুমেন্টরি
স্মৃতি চিরন্তন ।। ভাস্কর্যের শব্দায়ন ০৪ ।।
ডকুমেন্টরি